সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ হয়েছে
সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ হয়েছে
সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। গত চার দিনে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনের ৯৯ শতাংশ সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সংস্কারকাজ পুরোপুরি শেষ হচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নির্মাণ করা হবে আরও তিনটি কালভার্ট। ইতিমধ্যে নতুন কালভার্ট নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে অক্টোবরে ট্রেন চলাচল শুরু করতে চান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ লক্ষ্যে চলছে কাজ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টি ও বন্যার বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে এই রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এবার গত ১০০ বছরের মধ্যে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এ কারণে কিছু স্থানে রেললাইন ডুবে গেছে। পানির স্রোতে কোথাও ৫ মিটার, কোথাও ৭ মিটার; এভাবে ২৫০ মিটার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওসব এলাকায় রেললাইন থেকে পাথর-মাটি সরে গেছে। ফলে ওসব স্থানে দেবে গেছে।’
তবে বন্যায় রেললাইনের বড় ধরনের কোনও ক্ষতি হয়নি উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন ২০ আগস্ট থেকে সংস্কার শুরু হয়। বুধবার পর্যন্ত চার দিনে ৯৯ শতাংশ সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। বৃহস্পতিবার পুরো সংস্কারকাজ শেষ হবে।’
এমন ভয়াবহ বন্যার কথা মাথায় ছিল না, কারণ গত ১০০ বছরেও এমন বন্যা হয়নি উল্লেখ করে মফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই যেহেতু এত বড় বন্যা হয়েছে, সেহেতু এখন সবকিছু মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করবো। ক্ষতিগ্রস্ত সাতকানিয়ার তেহমুনি এলাকায় পানি চলাচলের জন্য আরও তিনটি নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। কালভার্ট নির্মাণের জন্য স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। শিগগিরই তিনটি কালভার্টের কাজ শুরু হবে। তবে বন্যার কারণে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন পিছিয়ে যাবে না। সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে অক্টোবরে ট্রেন চলাচল শুরুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা।’
প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি জানিয়ে মফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ৯০ কিলোমিটার দৃশ্যমান। প্রকল্পের কাজ ৮৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ছোট-বড় সবকটি রেলসেতু। বাকি কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’
গত ৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ছয় দিনের টানা বৃষ্টিতে ডুবে যায় চট্টগ্রাম নগরী। বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে পুরো জেলা। এতে সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনি এলাকায় নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের এক কিলোমিটার অংশে পাথর ও মাটি সরে দেবে গিয়েছিল। আঁকাবাঁকা হয়ে গিয়েছিল কিছু অংশ। পাশাপাশি লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। এবার ভয়াবহ বন্যার জন্য অনেকাংশ দায়ী অপরিকল্পিত রেললাইন। রেললাইনের পাশ দিয়ে পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট না থাকায় পানি নামতে পারেনি।’
বন্যায় রেললাইনের পটিয়া শ্রীমাই খালের ওপরের রেলসেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেতুর রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে গিয়েছিল। ইতোমধ্যে সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে বলে জানালেন পটিয়া রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে অক্টোবরে ট্রেন চলাচল শুরু করতে চান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯০ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি আছে ১০ কিলোমিটার।
পাঠকের মতামত